× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
আংসাং কথা - ৩

পাঠান আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলেও কামতাপুর গড়দুর্গের ইতিহাসকে রক্ষা করতে পেরেছি কই?

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
Kamtapur’s history neglected

দিনহাটার কয়েক কিলোমিটার দক্ষিনে গোসানিমারি। পঞ্চদশ শতকে সেখানে কামরূপ রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করা হয়েছিল। নগরটির নাম ছিল কামতাপুর। যথেষ্ট সম্পদশালী নগর। কামরূপের রাজধানী বলে কথা! রাজধানীকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল একটি গড়। প্রায় পাঁচ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা এই গড়দুর্গ ছিল সমকালীন ভারতবর্ষের সবচাইতে বড় দুর্গ। একটি মূল দুর্গকে ঘিরে ছোট অনেকগুলো দুর্গ থাকায় সেই গড় হয়ে উঠেছিল প্রায় দুর্ভেদ্য। গড়কে ঘিরে ছিল বিরাট প্রাচীর। উচ্চতায় তিরিশ থেকে চল্লিশ ফিট এবং চওড়ায় সবচাইতে কম আড়াইশো ফিট। গড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যেত একটি ছোট নদী। নাম ‘সিঙ্গিমারি’। দুশো বছর আগে প্রবল ভূমিকম্পে জলঢাকা নদী বাঁদিকে বাঁক নিয়ে সিঙ্গিমারিকে গিলে ফেলে। গড় এবং তার পশ্চিম দিকের সুরক্ষা প্রাকারের ধ্বংসাবশেষের মাঝখান দিয়ে বয়ে যায় জলঢাকা। ওদিকে যার নাম মানসাই। কিন্তু স্থানীয় লোক জলঢাকাও বলে না, মানসাইও না। তাঁরা বলে সিঙ্গি্মারিই।

কেবল ভুটানে যাবার প্রবেশপথকেই ‘দুয়ার’ বলে না, গড়ে ঢোকার প্রবেশপথও ‘দুয়ার’।  কামতা দুর্গে ঢোকার জন্য এক ডজন প্রবেশপথ ছিল এবং এইগুলির নাম ছিল 'সন্ন্যাসী দুয়ার', 'বাঘ দুয়ার', 'শিল দুয়ার', 'হেকো দুয়ার' ---  এই রকম। আদাবাড়ি ঘাট, যেখানে এখন নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণ হয়েছে, তার কাছাকাছি ‘শিল দুয়ার’ এখনো বর্তমান। কামতা দুর্গের দুয়ার-এর  বাকি এগারটার কী খবর, তা অবশ্য আমার জানা নেই। শিল দুয়ারের কয়েক কিলোমিটার আগে নতুন বাজার নামক স্থানে আদাবাড়ি হাইস্কুল। স্ত্রী সেখানে কয়েক বছর মাস্টারি করেছিল। এই কারণে সেখানে আমিও দু-তিন বছর নিয়মিত যাতায়াত করেছি।

প্রথমবার গিয়ে দেখি এটা কাঁচা রাস্তা ফুট তিরিশেক উঁচু একটা বাঁধ-এর মধ্য দিয়ে  চলে গেছে। সেটাই যে কামতা দুর্গের সুরক্ষা প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ, তা জানা ছিল না। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর সুযোগ পেলেই মাঝে মাঝে সেই প্রাকারের উপরে উঠে হাটাহাটি করতাম। প্রাচীরের দু'পাশেই গভীর পরিখা খোঁড়া হয়েছিল। তার কিছু চিহ্ন গড়প্রাকারে হাঁটলেই চোখে পড়ে। সেই বিখ্যাত প্রকারের কিছু ধ্বংসাবশেষ ওদিকেই যা টিঁকে রয়েছে। প্রাকারের ইট যেভাবে লোকে নিজের মতো করে নিয়ে যায়,তাতে মনে হয় না ওই ধ্বংসাবশেষ অক্ষুন্ন থাকবে!

ইতিহাসের প্রতি আমাদের অবহেলা সত্যিই নির্মম!

পাঠান সেনা কামতাদুর্গ আক্রমণ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সফল হননি। কেউ কেউ মনে করেন যে, তারা শিল দুয়ার দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পেরেছিলেন। অনেকের মতে, তাঁরা দীর্ঘদিন গড় অবরোধ করে রেখেছিলেন। শীতলকুচি থেকে শিল দুয়ার যেতে বড়মরিচা, লালবাজার ---  এই সব জনপদ পাঠানদের হাতে স্থাপিত বলে অনুমান করা হয়েছে। ‘বড়মরিচা’ নামের সঙ্গে লঙ্কার কোন সম্পর্ক নেই। আমানতউল্লা খান জানিয়ে দিয়েছেন যে, পারসি শব্দ মুর্চা বা মুৰ্চাল মানে সেনানিবাস। ‘লালবাজার’ এসেছে লালবাই-এর নাম থেকে। তিনি ছিলেন কোনো পাঠান সেনাপতির পেয়ারের বাইজি। বুকানন সাহেব দুশো বছরের কিছু আগে এইসব জায়গায় ঘুরে গিয়েছিলেন। তখন বড়মরিচা ছিল একটি গমগমে শহর। তিনি ভূমিকম্পের আগে এসেছিলেন। জলঢাকার গতি পরিবর্তনের কারণেই বোধহয় বড়মরিচা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

জলঢাকা নদী আগে প্রাকারের বাইরে দিয়েই বইত। সেটাই স্বাভাবিক। নতুনবাজার বলে যে স্থানের কথা বলেছি, হয় তো জলঢাকা আগে সেখানে গিয়েই বয়ে যেত। লালবাজার-এর পর জলঢাকা পেরিয়ে পাঠানদের শিল দুয়ারে পা রাখতে হয়েছিল কি? বর্তমানে সীমানা প্রাচীরের যেটুকু টিঁকে আছে তা জলঢাকার পশ্চিম পাড়ে। অপর পাড়ে গোসানিমারির দিকে সুরক্ষা প্রাকারের কোনো চিহ্নই নেই। প্রাকারের দুটি বাহু এবং জলঢাকা নদীর কিছুটা নিয়ে একটি ত্রিভুজ তৈরি হয়েছে। শিলদুয়ার আর কাজলী কুড়া নামক দুটি স্থানে বাহু দুটি মিশেছে জলঢাকায়। এই সব পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমি একটি জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হই যার নাম ‘জয় দুয়ার’। সেটা ওই বারো দুয়ারের একটা হলেও হতে পারে। জয় দুয়ার থেকে প্রাকারের দূরত্ব বেশি নয়। সেই সময় হয়তো কামতাপুর দুর্গে প্রবেশ করবে বলে অপেক্ষমান লোকজন এখানে ভিড় করে থাকত। হয় তো পাঠান গুপ্তচর এখানে বসে বসে নজর রাখত আর হুঁকো খেত।

আমি একটা বিড়ি ধরিয়েই বসলাম। কল্পনা করার চেষ্টা করলাম: সামনেই দুর্গ প্রাকার।  ভেতরে মাথা উঁচিয়ে থাকা দুর্গগুলো চোখে পড়ছে।

গোসানিমারি মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা কামতা নগরী ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দুর্গের সুরক্ষা প্রাকারের যতটুকু বেঁচে আছে তা নীরবে বহন করে চলেছে অবহেলিত ইতিহাসের সিম্ফনি। একে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য ছিল।

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team