বাইপাস হইতে ঘুরিয়া আসিয়া সম্পাদক একদিন আমাকে পাকড়াইয়া কহিলেন, ‘ব্যাপারখানা কী বল তো কলম! সামনেই পৌরভোট। এই সময় লেখা জমা না দিয়া তুমি দিব্য গায়ে হাওয়া লাগাইয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছ! এই লহ, কোচদেশাগত মহাতামাক। সেবন করিয়া কাজে লাগিয়ে পড়ো।’
আমি মহাতামাক লইয়া ‘কলিকাগ্রাম কল্কে সমিতি’র গুপ্ত আখড়ায় গিয়া ধ্যানযোগে বসিলাম। সম্পাদক অবশ্য আদেশ দিয়াছেন ডুয়ার্স ঘুরিয়া ঘুরিয়া পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখিয়া রিপোর্ট লিখিতে। কিন্তু অত পরিশ্রমে কাজ কী? আখড়ায় বসিতেই দারোগা বসুনিয়া মলিন হাসিয়া কহিলেন, ‘দিবসহাটায় বিরোধিরা ওয়াক ওভার দিয়াছে। অবশ্য স্বেচ্ছায় দেয় নাই। প্রচুর আপত্তিযোগে দিয়াছে।’
পাশেই অবসরপ্রাপ্ত গণিতের অধ্যাপক অমূলদ সেনশর্মা ঝিমাইতেছিলেন। সহসা উত্তেজিত হইয়া চেঁচাইয়া বলিলেন, ‘ফল বেরুলেই দেখবে ডুয়ার্স জুড়ে ওয়াক ওভারের বন্যা বইবে। কেহ লড়াই করিয়া দিবে, কেহ না করিয়া।’
তখনই নিশ্চিত হইয়াছিলাম যে ফালতু ঘুরিয়া ঘুরিয়া খবর যোগার করিলে পন্ডশ্রম হইবে। ভোটের ভবিষ্যৎ এমনিই বোঝা যাইতেছে। বড়ফুল বাতাসের অভাবে শুকাইয়া পুনরায় বীজ হইয়াছে। হাত আর হাতুড়িতে সন্ধি হইয়াছে বলিয়া উল্লসিত হইবার কোন কারণ নাই। কেননা ওই সন্ধি কখনোই হয় না। সুতরাং ছোটফুলের জয়জয়কার লইয়া সন্দেহ করিবার কোনো কারণই নাই।
শুরুতেই শিলিনগরে সম্রাট অশোককে কনিষ্ক বানাইয়া ছোটফুল প্রচুর জিতিল। দিদিপীঠ হইতে নির্দেশ আসিল, বুদ্ধদেবকে রাজা করা হউক। বড়োফুল অবশ্য জোর গলায় বলিয়া আসিতেছিল যে তাহাদের ‘সাইলেন্ট ভোট’ সব হিসাব উল্টাইয়া দিবে। কিন্তু সেইসব ভোট সাইলেন্ট-ই থাকিয়া যাওয়ায় তাহারাও ফল প্রকাশের পর হইতে সাইলেন্ট। এইজন্যই মহাকবি, কাব্যরত্ন, কাব্যভূষণ শ্রীশ্রী পুরন্দর ভাট লিখিয়াছিলেনঃ
নিজমুখে সাইলেন্ট বলা ভালো কথা নয়।
লোকে যারে সাইলেন্ট বলে সেই সাইলেন্ট হয়।।
তাহার পর তো পুরভোট আসিল। রাজ্যজুড়ে ভোট আসিলে প্রচুর ভূতপ্রেত আসরে নামিয়া পড়ে। তবুও লোকে ভাবিতেছিল বৈকুণ্ঠপুরে গোলমাল বিশেষ হয় না। সেইখানে বড়োফুল ছোটফুল মিলে/ ফ্ল্যাগ আঁটে ঘরের পাচিলে। এক কথায় ‘শান্তিপূর্ণ’। কিন্তু পুরভোটের দিন সেইখানেও নাকি ভূতপ্রেতে নামিয়াছিল। কাহারা জানি মুখোশ পরিয়া, হস্তে মুগুর লইয়া ছোটাছুটি করিয়াছে। কেহ কেহ কড়মড় করিয়া ইভিএম খাইতে গিয়াছিল। ভোটের কাল শেষ হইবার আগেই কোন এক বুথে নাকি দরজা বন্ধ করিয়া কী কী সব অশরীরি কান্ড হইয়াছে। ব্যাপার দেখিয়া বৈকুণ্ঠপুরের সমর্থকেরাও গম্ভীর মুখে মাথা নাড়িয়া কহিয়াছে, ‘তাই তো! বড়ো খারাপ হইল। আমরা তো এম্নিতেই জিতিব। ভূত নামাইবার কী প্রয়োজন?’
কোচরাজ্যে অবশ্যি ভূতপ্রেত নামিবার তেমন কোন খবর নাই। অথবা অল্পস্বল্প ভৌতিক উপদ্রবকে উক্ত রাজ্যে স্বাভাবিক বলিয়া গণ্য করা হয়। ফল প্রকাশের পর দেখা যাইতেছে বৈকুণ্ঠপুরের মত কোচরাজ্যেও ছোটফুলের বাগান রীতিমত সম্প্রসারিত। ময়নাগড়ে এই প্রথম পুরভোট হইল। সেইখানে যে ছোটফুল জিতিবে তাহা যে কেউ গণনা করিয়া আগেই বলিয়া দিতে পারিত।
এই পর্যন্ত লিখিয়া ‘সাপ্তাহিক সংবাদ বুলেট’ পত্রিকার সম্পাদক গণবিপ্লব ব্যানার্জিকে দেখাইতেছি, অকস্মাৎ দ্বিধাগ্রস্ত রাজনৈতিক সমর্থক এবং বয়সে যুবক ভক্ত লিটন কহিল, ‘বিধানসভার ভোটগুলিও বড়োফুলে পড়িল না। কী হইল কহিতে পারেন?’
আখড়ার স্বভাবকবি ছিলিমের শেষাংশ ভস্মীভূত করিয়া জল-বাতাসা খাইয়া শান্ত কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘কহিবার কী আছে? এই বিষয়ে মহাকবির কথা শুন –।’
বলিয়া পয়ার ছন্দে আবৃত্তি করিলেনঃ
মহামান্য মোদিসাব প্রধানমন্ত্রী হয়েন।
তথাপি পৌরভোটে কাউন্সিলর রয়েন।।
হায় যদি প্রধানমন্ত্রী চেয়ারম্যান হবে।
পুরবাসী মাস্ক আঁটা মুখ ফিরায়ে রবে।।
ভক্ত লিটন দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, ‘আর আশা নাই। নেক্সট উইকে দলবদল করিব।’
কে জানি ফোড়ন কাটিল, ‘তা হলে কি সিপিএম-এ যোগ দিবেন?’
সাথে সাথে প্রাক্তন জেলা কমিটির মেম্বর রক্তকমল দাশগুপ্ত ফোঁস করিয়া উঠিলেনঃ ‘ইঃ! সিপিএম-এ যোগদান করা অত সহজ নয়। আমাদের শৃঙ্খলা প্রবল। অন্ততঃ পাঁচ বৎসর …।’
ভক্ত লিটন তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিলঃ ‘না না। আমি ছোটফুলেই যাব।’
বুদ্ধদেব যেমন শিলিনগরে তেমনই মহাসূর্য কোচরাজ্যের দায়িত্ব লইবেন বলিয়া জানা গিয়াছে। বৈকুণ্ঠপুরে কে হইবেন তাহা লইয়া অবশ্য গুজবের অন্ত নাই। তবে আগাইয়া আছেন ভিক্টরবাবু এবং পিউকাঁহা দেবী। ভোটের আগে বৈকুণ্ঠপুরীয় ছোটফুলেরা এমন ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে মাতিয়াছিল যে মহানগর হইতে ভারি ওজনের মন্ত্রীকে আসিয়া তিনদিন ধর্মশালায় শিবির স্থাপন করিয়া অবস্থান করিয়াছিলেন। শোনা যায় তিনি যুবনেতা সাগরতীর-কে নষ্টামি-দুষ্টামি করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
যাহা হউক। মহাতামাকের কল্যাণে আগামিতে ডুয়ার্সে খুচরা লিখিতে পারিব বলিয়াই বিশ্বাস। ভাবিয়াছিলাম পুরভোটে ডুয়ার্সে বড়োফুলের জয়জয়কার দেখিব। ইহাতে আমার লাভ হইত। উহাদের কোন কাউন্সিলরকে ধরিয়া মানালি-তে তীর্থভ্রমণের খরচ এবং কৃষ্ণননী কিনিবার বরাদ্দ আদায় করিব। তাহা আর হইল কই?
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team