× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg

আনকোরা এই ডুয়ার্সের নদীতে পা দিলেই তো ভুটান!

প্রতাপ কুমার মণ্ডল
Tourist Spot on the bank of Bhutan River

‘ভুটানের বর্ডার তাহলে কোনটা?’

প্রশ্নটা করাতেই একেবারে হাঁ হাঁ করে উঠলেন ভদ্রলোক৷ ‘আরে, বর্ডার কী বলছেন? ওই দেখুন, ওই যে ওই গেটের তালাটা যখন খুলে দেব, আপনারা নদীতে পা দিলেন৷ ব্যস, ওটাই তো ভুটান৷ বিকেলে নদী পার হওয়ার সময় দেখবেন, লোহার বিম পুঁতে সীমানা করা আছে৷’

‘বাঃ, রিসর্টের দেওয়ালের ওপারেই ভুটান সীমান্ত৷ ডুয়ার্সে এটাই বোধহয় কোনও আন্তর্জাতিক সীমান্তের সবচেয়ে কাছের ট্যুরিস্ট স্পট৷’ স্বগক্তোতিতে সোচ্চার হলাম উচ্ছাসে৷

‘এটা ঠিক বলেছেন’-- এই বলে আমাদের দেখভালের তদারকিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ভদ্রলোক৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিজম বিভাগের উদ্যোগে উত্তরবঙ্গে ‘এক্সপিরিয়েন্স বেঙ্গল’-এর নতুন প্রকল্প চামুর্চি ইকো-রিসর্টে দাঁড়িয়ে রিসর্ট ম্যানেজারের সাথে চলছিল এমনই কথোপকথন৷

ডুয়ার্সের এই নতুন গন্তব্যে বেড়ানোর খোঁজ পেয়ে দল বেঁধে যাওয়াই ঠিক হল৷ কত আর ঘরে বসে থাকা যায়! একমত হয়ে সকলে এক বুধবার শিয়ালদা থেকে রাতের ট্রেনে চেপে পরদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মাল জংশনে নেমে পড়লাম৷ তিনটে সুমোতে হৈ হৈ করে রওনা দিলাম প্রায় ৪৫ কিমি দূরের চামুর্চির দিকে৷

উত্তরবঙ্গের যে কোনও স্টেশনে নেমে মালপত্র গাড়িতে তুলে হাইওয়ে দিয়ে ছুটতে শুরু করলেই, মনটা ভালো হয়ে যায়৷ এবারেও তার ব্যতিক্রম হয় নি৷ ৩১ সি জাতীয় সড়ক ধরে চালসা, খুনিয়া প্রভৃতি চেনা জায়গাগুলো পার হচ্ছি এক-এক  করে৷ নেওড়া জলঢাকা মূর্তি ডায়না প্রিয় নদীগুলি পেরিয়ে গেল৷ তারপর বাগরাকোট পার করে বানারহাটের আগে গাড়ি একটা শর্টকাট ধরল৷ শুরু হল আমাদের সবুজের অভিযান৷ চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে কালো পিচরাস্তা৷ চা গাছের ফাঁকে রেইন ট্রি-র নজরদারি৷ সুদীর্ঘ পথ অজগর সাপের মত এঁকেবেঁকে চলে গেছে৷ কোথাও আবার রাস্তার পাশাপাশি একটু দূর দিয়ে চলেছে ট্রেন-লাইন৷ বেশ কয়েকটা চা বাগান পেরিয়ে পৌঁছলাম ছোট্ট গঞ্জ আমবাড়ি৷ আমবাড়ি মোড় থেকে ঢুকে সাকুল্যে প্রায় এক ঘণ্টা পর চামুর্চি বাজার এল৷

চামুর্চির বাজার এলাকা বেশ জমজমাট৷ অনেকগুলো দোকান, সবজি ও মাছবাজার, মিষ্টি ও চায়ের দোকান, মোবাইল স্টোর, ইংরাজি সুকল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কী নেই সেখানে! ব্যস্ত জনপদে নেপালী, ভুটিয়া শ্রেণীর পাহাড়ি মানুষের সংখ্যাই বেশি৷ বাজার পেরিয়ে আধা  পাথুরে রাস্তা ধরে চলেছে গাড়ি৷ চুনাভাট্টিতে তাসি চোলিং গুম্ফাকে ডানদিকে  রেখে চা বাগানের পাশ কাটিয়ে পথ৷ এল এক বিশাল প্রান্তর-- তার ঢাল উঠে গেছে উপরের দিকে৷ ঢাল ধরে পৌঁছে গেলাম এক নদীর পাড়ে৷

সুকৃতি নদী-- অল্প জলের ধারা, চওড়া রিভার-বেড৷ গাড়িগুলো পরপর সেই জলের উপর দিয়ে বালির চর পেরিয়ে উল্টোদিকের পাড়ে উঠল৷ কিছুটা এগিয়ে একটা ছোট্ট সিমেন্টের কালভার্ট পেরিয়ে ডানদিকে ঘুরতেই চোখে পড়ল পার্কের ওয়েলকাম-গেট৷ গাড়ি নিয়ে গেট পেরিয়ে আমরা চামুর্চি ইকো-ট্যুরিজম পার্কের অন্দরে ঢুকে সোজা রিসেপশনে৷ তিনদিক ভুটান-পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতির কোলে, জঙ্গুলে সবুজ আর জোড়া নদীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে পৌঁছে গেলাম৷ নীল আকাশ এমনভাবে মাথার উপর নেমে এসেছে, যেন দুহাত দিয়ে আগলে রেখেছে সে তার আঙিনায় গড়ে ওঠা নতুন ভ্রমণকেন্দ্রটিকে৷ ভৌগোলিক অবস্থানে এই জায়গা পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে৷ রাজ্য পর্যটন বিভাগের সহায়তায় বছর কয়েক আগে থেকে এখানে ট্যুরিজম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে৷

কালচে সবুজ পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে চা-বাগান, নদী আর পাহাড় ঘেরা ট্যুরিস্ট রিসর্টের অবস্থানটি অতুলনীয়৷ সামনে তার পাঁচিলঘেরা সুদীর্ঘ ঘাসের লন৷ তার মধ্যে দিয়ে রঙ্গীন টালির পায়ে চলা রাস্তাগুলো খুশিমত চলে গেছে এদিক-সেদিক৷ মাঝেমাঝে নানা রঙের সিমেন্টের ছাতার নিচে বাঁধানো বসার জায়গা৷ সেখানে রিসর্টের লোকজন ছাড়াও স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে বাইক-আরোহী প্রেমিক-প্রেমিকাদের একচেটিয়া অধিকার৷ পার্কের মাঝখানে উঁচু নজর মিনার-- পাখির চোখে দেখে নেওয়া যায় পাহাড়ি উপত্যকায় দুয়ারপানি নদীর চালচলনে ছটফটানি৷ বিশাল ডরমিটরি সহ দুটো দোতলা বাড়ি নিয়ে রিসর্টে সাকুল্যে ঘর মোট আটটি৷ অতিথি আপ্যায়নের জন্য আছে আলাদা বড় ডাইনিং হল সহযোগে জব্বর ব্যবস্থাপনা৷ 

বাংলার আঙিনা থেকে ড্রাগনের দেশ ভুটানে ঢোকার আঠেরোটি গেটের অন্যতম চামুর্চি, ডুয়ার্সের ট্যুরিজম মানচিত্রে নতুন চিন্তার ফসল৷ নৈঃশব্দের আবহে পরিবেশ ও প্রকৃতির টানে অবসর যাপনে আসতে পারেন অবশ্যই৷ আর বেড়াতে এসে যারা রোমাঞ্চ খুঁজে বেড়ান তারা তো খুশিই হবেন৷ রিসর্টের নদী প্রান্তের গেট পেরিয়ে হাঁটু জলে নদী পার হয়ে হাঁটা পথে জঙ্গলের ভিতর পাঁচ কিমি দূরত্বে পাহাড়ের পাদদেশে মহাকাল দেখে নেওয়া যায়৷ মহাকালের অদূরে ‘মিউজিকাল স্টোন কেভ’৷ পাহাড়ের ভিতরে জোরে আওয়াজ করলে শব্দের সুন্দর অনুরণন ভরিয়ে তোলে পথশ্রমের ক্লান্তি৷ চামুর্চি থেকে গারুচিরা, কালাপানি, রোহিতি প্রভৃতি স্থানে ঘুরলে সেই অঞ্চলের মানুষের নিস্তরঙ্গ জনজীবন চোখে পড়বে৷ 

ডুয়ার্সে প্রকৃতির বিচিত্র রূপের সৌন্দর্য অনুভূত হয় চামুর্চির পথে প্রান্তরে৷ একদিন রিসর্টের বারান্দায় বসে দেখছি, পাহাড়ের মাথায় জড়ো হওয়া ধূসর-কালো মেঘের দল হঠাৎ কেমন চঞ্চল হয়ে উঠল৷ উত্তরে বাতাস বইছিল জোরে৷ বাতাসের তাড়া খেয়ে মেঘেরা পাহাড়ের দিক থেকে ধেয়ে এল নদীর দিকে৷ তার একটু পরেই কালো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ল নদীর বুকে৷ ক্রমে সেই বৃষ্টি নদী পেরিয়ে রিসর্ট ও তার আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ল মুষলধারে৷ রিসর্টে বসে বৃষ্টি আসার দৃশ্য উপভোগের অনুভূতি লিখে বোঝানো দুষ্কর৷ শুধু মন অনুভব করে তা নিজের মত করে৷ একটু পরে বৃষ্টি থামল৷ ভাঙা মেঘের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিল সূর্য৷ রোদ উঠল ঝলমলিয়ে৷ আমরাও রিসর্টের পিছনের নদী পেরিয়ে বেরিয়ে পড়লাম চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে গ্রামের অন্দরে৷ স্থানীয় মানুষদের সাথে আলাপ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাঝে তাসি-চোলিং গোম্পা দেখা হল৷ নানা রঙের বাড়িতে লাগানো ‘উইশিং ফ্ল্যাগ’ হাওয়ায় উড়ছে৷ পরিচ্ছন্ন এলাকার মধ্যে দিয়ে হাঁটাপথে বড় রাস্তায় পৌঁছলাম৷ প্রকৃতি এখানে দূষণমুক্ত--- চকচকে পিচরাস্তা সোজা চলে গেছে ভূটানের অন্য চেকপোস্টে৷ বড় রাস্তার মোড়ে চা-মিষ্টির দোকানে জমে উঠল আড্ডা৷

পরদিন ইকো রিসর্টের প্রধান ফটক থেকে বেরিয়ে ডান হাতি পথ ধরে ভুটান সীমান্তের দিকে চলেছি৷ এখানে সীমান্তে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই৷ নেই এপার-ওপারের হাজারো বিধিনিষেধের কড়াকড়িও৷ দুধারে সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে কাঁচাপাকা রাস্তা৷ পাহাড় থেকে নেমে আসা অবিরাম জলস্রোত জমির আলের পাশ দিয়ে এসে, রাস্তা ভিজিয়ে বয়ে চলেছে নিচের নাবাল জমিতে৷ মাঝেমাঝে ওই স্রোতে জাল বিছিয়ে মাছ ধরছে গাঁয়ের ছেলেবুড়ো মিলে৷ সেখান থেকে এগোলে, ডানদিকে সুপারি গাছে ঘেরা কাঠ পাথরে গড়া ধবংসপ্রায় রাজবাড়ি চোখে পড়বে৷ কথিত, উত্তরবঙ্গের এক রাজপরিবার গ্রীষ্মকালে এখানে নদী পাহাড়ের সান্নিধ্যে ছুটি উপভোগ করতেন৷ স্বাধীনতা উত্তর পর্বে সরকারি হস্তক্ষেপে রাজত্ব হারানোর নিয়মে আজ সে রাজবাড়ি বিপন্ন, উপেক্ষিত৷          

ঐতিহ্যের স্মৃতি ক্যামেরা বন্দী করে এসে পড়লাম ভুটানের সামসে (সামচি)-র তাসিজং গ্রামে৷ এখানে সার বেঁধে ডলোমাইট কারখানাতে মেশিনে ডলোমাইট ভাঙা ও সরবরাহের কাজ চলছে৷ এখানে লক্ষণীয় যে শ্রমিকেরা অধিকাংশই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে এসে কাজ করছে৷ এ গ্রামের বাড়িঘর, দোকানপাটে ব্যবহৃত ভাষা ও চিহ্নে ভুটানি রাজতন্ত্রের সংকেত৷ বাড়ি লাগোয়া ছোট্ট দোকানঘরে রোজকার খাবার দাবার ও অন্যান্য টুকিটাকি জিনিসের সাথে স্থানীয় ও বিদেশী মদও পাওয়া যায়৷ মানুষেরা মিশুকে ও অতিথিবৎসল৷ দুদেশের সীমান্ত অঞ্চল হওয়ায় চামুর্চিতে গড়ে ওঠা ইকো ট্যুরিজম ক্ষেত্রে চালু রয়েছে এক মিশ্র সংস্কৃতির জীবনধারা৷ উত্তরবঙ্গের পাহাড় আর ডুয়ার্সের সমতল এখানে মিলেমিশে একাকার৷

পরিবর্তনের রীতি মেনে পৃথিবী ও প্রকৃতি পাল্টে যাচ্ছে প্রতিদিনই৷ ফলে প্রথাগত ভ্রমণ ভাবনা পাল্টে গেছে ইকো-ট্যুরিজমে৷ ইকো ট্যুরিজম পরিকাঠামোতে নদী, পাহাড়, অরণ্য নিয়ে চামুর্চির মত ভ্রমণ গন্তব্য ডুয়ার্স ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও নেই৷ সারা বছর দারুণভাবে উপভোগ্য হলেও বর্ষায় বৃষ্টিস্নাতা চামুর্চির অনন্য রূপ দেখার মত৷ অবসর বিনোদন বা উইক-এন্ডে চিরকালীন সৌন্দর্য দেখতে অনায়াসে এখানে আসা যায়৷ ডুয়ার্স বলেই অদূর ভবিষ্যতে চামুর্চি হয়ে উঠবে এক জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র সন্দেহ নেই৷

থাকার সেরা জায়গা ‘চামুর্চি ইকো রিসর্ট’৷ অনেক ঘর ছাড়াও ডর্মিটরি আছে৷ যোগাযোগ – ৯৮৩০৫০৮০০৯ অথবা ই মেল -- chamurchiecoresort@gmail.com

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team