প্রবল গরমে ডায়াবেটিস রোগীরা তাঁদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে খুবই চিন্তায় থাকেন। আর গরম মানেই প্রচুর ফলের সমাহার এবং তাদের অধিকাংশই মিষ্টি। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা ফল খাবেন কিনা তা নিয়ে খুব চিন্তায় থাকেন।
ফল খেলে ডায়াবেটিস রোগীর কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু বেছে বেছে ফল খাওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, ফলের শর্করা ডায়াবেটিস রোগীর যা ক্ষতি করে তার চেয়ে ঢের বেশি উপকার করে। যেকোনো ফলেই জল বাদে প্রধান উপাদান হল সুগার। তাই ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। এছাড়া ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেলস যথেষ্ট পরিমাণে থাকে, সেগুলো ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ানোর সাথে সাথে আরও অনেকভাবে ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
গরমকালে কোন ফল খাওয়া যাবে আর কোনটি খাওয়া যাবে না তা জানার জন্য দেখতে হবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। এই ইনডেক্সের ওপরের দিকে ফল কিংবা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। খেতে হবে ইনডেক্সের নীচের দিকে বা মাঝামাঝি থাকা ফল।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল খাবার থেকে শরীরে কত গ্লুকোজ তৈরি হচ্ছে সে সম্পর্কে একটা ধারণা। আমরা যা খাই, রক্তে দু ঘণ্টা পর তার জেরে কতটা গ্লুকোজ তৈরি হল তার পরিমাপকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই বলে। এটি পরিমাপের জন্য যেকোনো খাদ্যকে গ্লুকোজের (জিআই ১০০) সঙ্গে তুলনা করা হয়। যা পয়েন্টের বিচারে সর্বোচ্চ ১০০ হিসেবে ধরা হয়।
জিআই-কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। কম বা লো জিআই (০-৫৫), মাঝারি বা মডারেট জিআই (৫৬-৬৯)এবং বেশি বা হাই জিআই (৭০+)। ফল বা অন্য যেকোনও খাবার এই তিনটি ভাগের মধ্যেই পড়ে। যাদের ডায়াবিটিস আছে তাদের মূলত এই হাই জিআইযুক্ত খাবারে বিধিনিষেধ থাকে। বলা হয়, অধিকাংশ সময় লো অথবা মডারেট জিআই এবং কখনওসখনো হাই জিআইযুক্ত খাবার খাওয়া যায়। কোনও খাবারই একবারে বন্ধ করা উচিত নয়। তবে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। কারণ, ক্যালরির জন্য কার্বোহাইড্রেট জরুরি।
সহজে পাওয়া যায় এমন কিছু ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জেনে নেওয়া যাকঃ
লো গ্লাইসেমিক ইনেডেক্স যুক্ত ফল – আপেল, কমলালেবু, নাশপাতি, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, কালো জাম।
মাঝারি গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল – কলা, আনারস, আম, বেদানা, আঙুর, কিশমিশ, পেঁপে, লিচু, বাঙ্গি, আতা, কিউয়ি।
উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল – তরমুজ, খেজুর, সবেদা।
ডায়াবিটিসের কোন পর্যায়ে কতটা ফল খাওয়া উচিত
প্রি-ডায়াবেটিক বা বর্ডার লাইন সুগার – সমস্ত রকমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল দৈনিক ২০০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে।
নিয়ন্ত্রিত সুগার – উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল সপ্তাহে দুবার ১৫০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে। অথবা মাঝারি বা কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল ২০০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে।
হাই সুগার – বেশি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত ফল না খেয়ে দৈনিক ১০০ গ্রাম মাঝারি ইনডেক্সযুক্ত ফল খাওয়া যেতে পারে অথবা ১৫০ গ্রাম অল্প গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল খাওয়া যেতে পারে।
শিশুর ডায়াবিটিস থাকলে ড্রাইফ্রুটস, অ্যাডেড সুগারযুক্ত ক্যান, প্রসেসড ফল বা ফল জাতীয় খাবার যেমন জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, জুস ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় সুগার
লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ফল দৈনিক ২০০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি
১) পটাশিয়াম অনিয়ন্ত্রিত – যাদের কিডনির সমস্যা থাকে তাদের শরীর থেকে পটাশিয়াম পুরোপুরি বেরোয় না। সেই কারণে শরীরে পটাশিয়াম বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পটাশিয়ামযুক্ত ফল বাদ দিতে হবে। যেমন, কলা, লেবু, খেজুর, ফলের রস, আম, বেদানা, চেরি, কিউয়ি ইত্যাদি।
২) পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রিত – এক্ষেত্রে পটাশিয়ামযুক্ত ফল বাদে সুগারের মাত্রা অনুযায়ী ১০০ গ্রাম ফল রোজ খাওয়া যেতে পারে।
কোন খাবারে জিআই কত
লো জিআই খাবার – ওটস, বার্লি, পাস্তা, রাঙা আলু, ভুট্টা, ডাল, মটর, শাকসবজি, গাজর, সয়াবিন, ডিম, প্রায় সব ধরনের মাছ ও মুরগির মাংস।
মডারেট জিআই খাবার – ঢেঁকি ছাঁটা চাল, লাল আটার রুটি, নুডলস, কুমড়ো, কাঁচাকলা, মধু, ব্রাউন ব্রেড, ব্রাউন রাইস।
হাই জিআই খাবার – সাদা চাল, ময়দা, আটার রুটি, ময়দার পরোটা, হোয়াইট ব্রেড, চিঁড়ে, পপকর্ন, কর্নফেক্লস, বিস্কুট, ইনস্ট্যান্ট ওটস, আলু, চিনি।
ওজন বাড়লে সেখান থেকে আসে ডায়াবিটিসের সম্ভাবনা। এছাড়া রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়লে বিপাক ক্রিয়া কমে যায়। তাই সুগারের সমস্যা থাকলে রোজ শরীরচর্চা করা উচিত। গরমে ঘাম বেশি হয়। যে কারণে শরীরে ডিটক্সিফিকেশনও ভালো হয়। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগান। গরমের দিনে তেষ্টা বেশি লাগে। অন্য যেকোনো খাবারের পরিবর্তে শুধু গলা ভেজাতেই ভালো লাগে। তাই বলে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে কোল্ড ড্রিংকস, ফ্রুট জুস, মিল্ক শেক, প্যাকেটজাত ফলের রসের মতো লোভনীয় পানীয় মোটেও ভালো নয়। কারণ, এই ধরনের পানীয়তে চিনির ভাগ বেশি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন ডাবের জল, ওআরএস ইত্যাদি। কিন্তু প্রশ্ন হল, ডায়াবিটিস থাকলে কি ওআরএস খাওয়া যায়?
ওআরএস বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশনের কম্পোজিশন বানানো হয়েছে শরীরে উপস্থিত ফ্লুইডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তাই ওআরএস যে কেউ খেতে পারেন। এমনকি ডায়াবিটিস থাকলেও ওআরএস খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে এক লিটার জলে এক প্যাকেট ওআরএস গুলে তৃষ্ণা পেলেই খান। এতে শরীরে জলের জোগান বাড়বে। ইলেক্ট্রোলাইটস ব্যালেন্সও ঠিক থাকবে। তবে ওআরএসের মধ্যে ট্রেটা প্যাকে থাকা ইলেক্ট্রা সুরক্ষিত। কারণ, এতে ২.৭ গ্রাম ডেক্সট্রোজ (গ্লুকোজ) থাকে। কিন্ত এনার্জলে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে তাই এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য নিরাপদ নয়।
অনেকেই হাতের কাছে ওআরএস নেই বলে নুন-চিনির জলেই কাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই জল কিন্তু একেবারে ভালো নয়। এতে থাকা চিনি ও নুন – দুইই আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। একদিকে চিনি থেকে বাড়বে সুগার অন্যদিকে নুন থেকে বাড়বে প্রেশার।
গরমে খেতে ইচ্ছে না করলেও ডায়াবেটিক রোগীদের খেতেই হবে। তারপরই ওষুধ খেতে পারবেন। খালি পেটে ওষুধ খেলে সুগার ফল করে যেতে পারে। দিনে অন্তত ৩ লিটার জল খেতে হবে। খুব প্রয়োজন না থাকলে রোদে বাইরে বেরোবেন না।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team