× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: নভেম্বর, ২০২১
সম্পাদকের কলম
এ দেশের বুকে আরোগ্য আসুক নেমে
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
পর্যটনের ডুয়ার্স
বান্দাপানি বনবাংলোয়
শান্তনু রায়
পর্যটনের ডুয়ার্স
বরফে ঢাকা নাথাং ভ্যালি
প্রতাপ কুমার মণ্ডল
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও উত্তরের উত্তরণ লিপি। পর্ব - ৫
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
রাজনগরের রাজনীতি। পর্ব - ৯। স্বাধিকারের দাবিতে বারবার আন্দোলনমুখী হয়েছে কোচবিহার।
অরবিন্দ ভট্টাচার্য
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। পর্ব - ১
সব্যসাচী দত্ত
ধারাবাহিক উপন্যাস
ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট। পর্ব - ১৩
সুজিত দাস
নিয়মিত কলম
মুর্শিদাবাদ মেইল। বাংলার বিস্মৃত বীর মীরমদন
জাহির রায়হান
নিয়মিত কলম
ল্যাব ডিটেকটিভ। পর্ব -৩। ডিএনএ টেস্ট অপরাধী ধরায় বিপ্লব আনলো
নিখিলেশ রায়চৌধুরী
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব - ৯। ভালবাসা ভালবাসা
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
এই ডুয়ার্স কি তোমার চেনা? স্বর্ণকোশের কাছে
শৌভিক রায়
বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ভারতীয় নারী
সত্যবতী মতিলাল সিরসত: ভারতে আধুনিক ক্যান্সার গবেষণার রূপকার
রাখি পুরকায়স্থ
পুরানের নারী
যযাতি পত্নী শর্মিষ্ঠা
শাঁওলি দে
পাতাবাহার
মিনি চিজ কেক
পাতা মিত্র

গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও উত্তরের উত্তরণ লিপি। পর্ব - ৫

প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
Gramin Bank 5th EP

তুফানগঞ্জের পথে পরপর অনেকগুলো শাখা উদ্বোধন হয়েছিল। আর তুফানগঞ্জের বেশ কিছু ছেলে ব্যাঙ্কে চাকরিও করত। আমার বিশিষ্ট বন্ধু সুনীল মিত্রের বাডি ছিল তুফানগঞ্জের কাছেই গ্রামে। ওর দাদা অমূল্য্ মিত্র কৃষি বিজ্ঞানী ছিলেন এবং শিক্ষকতা করতেন। তিনি আমাদের ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর ছিলেন কিছুদিন। সুনীল নিজে কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক ছিল। ওদের গৃহ সংলগ্ন আবাদি জমিতে সুনীল নিজে হাতে চাষ করত। সুনীল ছাড়া দিলীপ বর্মা, বিষ্ণুপদ রক্ষিত, দুলাল, সমরেন্দ্র, দুলাল, অবিনাশ, বাবলু এবং আরো কিছু ঘনিষ্ট মানুষকে তুফানগঞ্জ থেকে আমরা পেয়েছিলাম। তাছাড়া মহীতোষও বোধহয় তুফানগঞ্জের মানুষ ছিল।

তুফানগঞ্জের চন্ডী পাল আমাদের ব্যাঙ্কের রাজ্য সরকার মনোনীত ডিরেক্টার ছিলেন। আমরা সমস্যায় পড়লেই উনার বাড়ি যেতাম। উনি সব সময় সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন। যতদূর মনে পড়ে অখিল প্রামাণিক জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন, তুফানগঞ্জের মানুষ। ওনার কাছে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম সরকারি ফান্ড আমাদের ব্যাঙ্কে রাখার জন্য। উনি রাজি থাকলেও আমলাদের অনিচ্ছায় আমরা বড় ফান্ড পেতে অসুবিধে হত।

উনি যখন ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের (ডিপিএসসি) চেয়ারম্যান তখন আমরা ওনাকে বোঝাতে পেরেছিলাম কোচবিহার জেলায় আমাদের শাখা সবচেয়ে বেশি। আমরা যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন দিই তবে শিক্ষক মশাইরা তাড়াতাড়ি বেতন পাবে। ব্যাঙ্ক বেতনের পরিমান সহ প্রাপক তালিকা পেলে মাঝে একটা ওয়ার্কিং ডে বাদ দিয়ে শিক্ষকরা বেতন তুলতে পারবেন। দিনে একটি শাখা থেকে ১০০ জনকে বেতন দেওয়া সম্ভব। ডিপিএসসি কোচবিহার আমাদের ব্যাঙ্ককে বেতনের ৩% কমিশন দিতে রাজি হয়েছিল।

কিন্তু আলোচনার শেষ লগ্নে দেবব্রত ঘোষ, এলবিও, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক উপস্থিত হলেন, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কও হাজির। অনেক তদ্বির তদারক করে ওরা প্রায় ৩০% কাজ বাগিয়ে নিয়ে গেল। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের যুক্তি “ওদের টাকা পয়সা তো আমাদের কাছেই থাকে, তাছাড়া আমরাই তো ওদের স্পনসর ব্যাঙ্ক। বিভিন্ন্ এলাকায় টাকা পয়সা পাঠাতে আমরাই তো রেমিটেন্সের ব্যবস্থা করব কাজেই আমরা এই কাজের একটা বড় শেয়ার পেতেই পারি”। ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান সাহেব যখন সম্মতি প্রদানের প্রান্তে তখন আমাদের ব্যাঙ্কের কিছু করার ছিল না। তবে কাজ শুরু করতে দেরি হয়নি মোটেই।

জলপাইগুড়ি ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান তখন আমার প্রিয় শিক্ষক সুবোধ মিত্র মশাই। একদিন সুবোধদার শিল্পসমিতি পাড়ার বাড়িতে চলে গেলাম। প্রণাম সারতেই সরাসরি বললেন “কী বলবি বল”। ওনাকে বোঝাতে আমার মোটেই বেগ পেতে হয়নি। উনি পরদিন দুপুর ১টায় অফিসে আসতে বলেছিলেন। ওখানে আমার ঘনিষ্ট বীরেশ শিকদার, ডিআই সাহেব, ফিনান্স অফিসার ও বড়বাবু উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা ঘন্টা দুয়েক চলেছিল। মিটিঙের মাইনুটস বানিয়ে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সাহের কাছে পাঠাতেই উনি দারুন খুশি হয়েছিলেন। শুধুমাত্র মিউনিসিপ্যালিটি এলাকার স্কুলগুলোর শিক্ষক বাদে জলপাইগুড়ি জেলার সমস্ত প্রাইমারি শিক্ষক উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বেতন পেতে শুরু করেছিল। আমার ঘনিষ্ট সহকর্মী দু-এক জন অবশ্য বলেছিলেন জেলায় এতগুলো ব্যাঙ্ক থাকতে শুধু আমরা কেন? একথা কারণ কদমতলা ছিল জেলার নোডাল ব্রাঞ্চ, ওই শাখার চাপ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।

তবে পরিশ্রম বাড়লেও এর সুফলও মিলেছিল। শাখাগুলোতে ডিপোজিট এবং পরবর্তীকালে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। কনজুমার লোন, গৃহ নির্মান ঋণ এমন কী উৎসব কালে স্বল্প মেয়াদী ঋণ এখনও চালু আছে। হয়ত এখন আমরা বেতন দিয়ে কোনও কমিশন পাই না, তবে শিক্ষককুলের সৌজন্যে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গিয়েছিল তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। মাস্টার মশাইদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের কর্মীদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। দিদিমনিদের বাড়িতে বানানো পিঠেপুলিতে আমিও ভাগ পেয়েছিলাম। বিকাশ মাহাতো যখন শান্তিনগর থেকে বদলি হয়েছিল তখন এক দিদিমনি হাতে বোনা সোয়েটার বিকাশকে উপহার দিয়েছিল। পুরনো শিক্ষকরা অনেকেই অবসর নিয়েছেন কিন্তু সম্পর্ক এখনও অটুট।

নিতাই খান ছিলেন আমাদের কুকুরজান শাখার সাব স্টাফ। শিক্ষকদের বেতন আমাদের কেন দেওয়া উচিত এ ব্যাপারে ওর সুস্পষ্ট যুক্তি ও সমর্থন ছিল। ও বোধহয় একমাত্র সাব স্টাফ যে অফিসের ইউনিফর্ম পরতে বিন্দু মাত্র সঙ্কোচ বোধ করতো না। জামার বুক পকেটের উপর সূতো দিয়ে তৈরী ব্যাঙ্কের এমব্লেম শোভা পেত। নিতাই ও দিলীপ বর্মাকে দেখেছি ঋণ পরিশোধের তাগাদা দিতে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে। যতদিন চাকরি করেছি আমাদের ইউনিয়নের বার্ষিক মিটিং-এ আমি প্রেসিডিয়াম থেকে মিটিং পরিচালনা করেছি, আর নিতাই খান ও দিনহাটার রতনকে বক্তব্য পেশ করতে ডেকে নিয়েছি।

একসময় জলপাইগুড়িতে অতিরিক্ত জেলাশাসক ছিলেন আর.ডি. মীনা, আইএএস। তিনি আমাদের ব্যাঙ্কের বোর্ডে ছিলেন, স্টেট নমিনি। সেবার পূজার আগে শিক্ষকদের বেতন দিতে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। মীনা সাহেব বললেন “চেক একদিন পরে ক্রেডিট হবে। আপনি কাল সকাল থেকে বেতন শুরু করতে বলুন”। বীরেশ মিত্র ম্যানেজার ছিল, ও আমাকে বলেল “ক্যাশ পাঠাবো। আপনি পুলিশ এসকর্টের ব্যবস্থা করুন”। শিলিগুড়ি থেকে কিছু শাখাকে এবং হেড অফিস থেকে আলিপুরদুয়ারে রেমিটেন্সের ব্যবস্থা করেছিল। জলপাইগুড়ি থেকে বেশির ভাগ শাখায় রেমিটেন্স পাঠানো গিয়েছিল এবং শিক্ষক বন্ধুরা ও জেলা প্রশাসন খুশি হয়েছিলেন। আমাদের কর্মীবন্ধুরা শুকনো ধন্যবাদও পাননি।

১৯৯৩ সনে আলিপুরদুয়ারে ভয়ঙ্কর বন্যায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। ডিপিএসসি থেকে অনুরোধ করেছিলো বন্যা পীড়িত শিক্ষকদের মাইনার ব্যবস্থা করতে। আমরা নিজেরা তখন আলিপুরদুয়ারে ত্রাণ পৌছানোর ব্যবস্থা করছিলাম। ব্যাঙ্ক কর্মীরা প্রশাসনকে বলেছিল “আপনারা ব্যবস্থা করুন। শহরটা চলাফেরার মত করে দিন। আমরা মুহূর্তের মধ্যে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করব”। তখন হাসিমারা হয়ে বা ফালাকাটা-সোনাপুর হয়ে আলিপুরদুয়ার যাওয়া যাচ্ছে না। মাথাভাঙ্গা- নিশিগঞ্জ হয়ে কোচবিহার প্রবেশের মুখে তোর্সা নদীর উপর রেল কাম রোড ব্রীজে ৮-১০ ঘন্টা আটকে থেকে বানেশ্বর হয়ে আলিপুরদুয়ার। সেবার আমাদের সহকর্মীরা চরম দুর্বিপাকের মধ্যেও শিড়দাঁড়া সোজা রেখে গ্রাহক পরিষেবা চালু করেছিল।

আবার আশির দশকের কাহিনীতে ফিরে আসছি। আরও একবার বলতে চাই আমার অনেক প্রিয় মানুষদের কথা বলা হয় নাই। অনেকের চেহারা স্মৃতিতে উজ্জ্বল কিন্তু নাম মনে করতে পারি না। সে যে কী নিদারুণ যন্ত্রনা বলে বোঝান যাবে না। একবার দার্জিলিং ম্যালের রাস্তায় এক নেপালী সুবেশ ভদ্রলোক ভাঙ্গা বাংলায় বললেন “পিএনসি দাজু কেমন আছেন”? এই নামে তো কেবল মাত্র ব্যাঙ্কের বন্ধুরাই ডাকে। সে ক্রমাগত ভাস্কর দাস, তপন ঘোষ ও শ্যামল ভট্টাচার্যের কথা বলেছিল। কফি শপে বসেছিলাম অল্প সময়। ম্যালে পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছিল। সঙ্কোচে ছেলেটির নাম জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। ইদানিং এমন ঘটনা হামেশাই ঘটে। একবার সেই ম্যালেই কিরন দেবীর সঙ্গে অল্প সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল। ওর মত মমতাময়ী কন্যা দুটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

‘এখন ডুয়ার্স’ পত্রিকায় এই লেখার প্রথম সংখ্যা পড়ে এক সতীর্থ জানাল “দাদা, আমি তো প্রথম থেকেই আপনাদের পাশে আছি কিন্তু আপনার লেখায় অনেকের নাম দেখলাম কিন্তু তাতে আমার নাম নিশানা নেই”। তাকে অকপটে বলেছি “এটা আমার জীবিকা-চরিতের অন্যতম দুর্বলতা। অনেক কাছের মানুষকে নিয়েই লেখার সময় ঝাপসা নজরে এসেছ। আমি সবাইকেই জড়িয়ে ধরতে চেয়েছি, ব্যর্থ হয়েছি দুর্বল স্মৃতিশক্তির জন্য”। আমি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলাম “আশা ছিল সবাই লেখাটা পড়বি, আর অকপটে আলোচনা করবি”।

খবর এলো এক সোমবার দিন রম্ভিবাজার শাখা খোলার পর ক্যাশ সেফে কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। অথচ ক্যাশ বুক বা ক্যাশিয়ারের ক্যাশ সামারি অনুসারে সেফে কমবেশি পাঁচ হাজার টাকা ছিল। পরাশর ঘোষ ছিল ক্যাশিয়ার, এক সেট চাবি ওর হেফাজতে থাকার কথা। যাইহোক, আমাকে পাঠান হয়েছিল সেদিন রম্ভিবাজার। সেদিন লেনদেন বন্ধ ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের কোনও হেলদোল নেই। মনি থাপা ছিল ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, সদাই নার্ভাস। কাছেই একটা পুলিশ ফাঁড়ি ছিল, তাদের মৌখিক ভাবে জানান হয়েছিল। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল টাকা ক্যাশে ফিরে এলে আমরা কোনও ব্যবস্থা নেব না। তবে আভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়েছিল। আমরা জানতাম পরাশর নির্দোষ। নিছক পরিস্থিতির শিকার ছিল সে। পরাশর মালবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় ফিরে এসেছিল। রাতে শিলিগুড়িতে থেকে পরদিন স্যারকে বিস্তারিত জানিয়েছিলাম। কিছুদিন পরে পরাশর অফিসার হয়েছিল। সুনামের সঙ্গে কাজ থেকে অবসর নিয়েছিল।

সেই সময় মংপুতে আমাদের ব্যাঙ্কের টিম ছিল একেবারে মারকাটারি। তপন ঘোষ, কিশলয়, সুভাষ, প্রদীপ ওরা একটা মেসে থাকত। ওই মেসে আমি বেশ কয়েকবার থেকেছি। একদিন সাহেব ডেকে বললেন, লাভার রাস্তায় অম্বিয়ক চা বাগানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (এগ্রিকালচার রিফাইনান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) থেকে ডঃ ভি.এস.মোতিয়াল এসেছেন। উনি মংপুর কাছে সিটং-এ কমলালেবুর বাগান দেখবেন এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। ওনাকে অম্বিয়ক চা বাগান থেকে তুলে মংপুতে নিয়ে যেতে হবে। অম্বিয়ক চা বাগানটির ব্যতিক্রমি সৌন্দর্য্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। ওখান থেকে বেরিয়ে ওনাকে নিয়ে সন্ধ্যায় মংপু পৌছেছিলাম। মনে আছে উনি নিরামিষ ভোজী ছিলেন কিন্তু ডিমে আপত্তি নেই। রাতে তিনি একটা বাংলোতে ছিলেন।

সকালে আমরা পায়ে পায়ে সিটং-এর পথে। তপন পথ প্রদর্শক আমরা দুজন অনুসরণকারী। ভদ্রলোক ছিলেন কাশ্মীরি আর নানা বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল চড়াই উতরাই আর ঝোপঝাড় ঠেলে চলতে। হঠাৎ হঠাৎ দু-একজনের পথিকের সঙ্গে দেখা হচ্ছিল। পৌছলাম এক পাহাড়ি গ্রামে। তপন লাঞ্চ ব্যবস্থা করেছিল রাই শাক ও ডিমের ঝোল। মাঝের সময়টা বেশ কিছু কৃষককে নিয়ে কমলা বাগান মোতিয়াল সাহেব ঘুরে দেখলেন। নানা রকম পরামর্শ দিলেন আর নানা তথ্যের নোট নিচ্ছিলেন। কৃষকরা দেখাল এক ধরনের পোকা গাছের শক্ত কান্ড ফুটো করে গাছের ক্ষতি করছিল, কোনও ওষুধেই মরে না। মোতিয়াল সাহেব সমাধান দিয়েছিলেন, তুলো বা ন্যাকড়া পেট্রলে ভিজিয়ে ফুটোর মুখে ঠেসে দিতে, সাতদিন কষ্ট করলে আর ওই পোকা আসবে না।

সেদিনের সফর, কৃষকদের সঙ্গে মিটিং, পাহাড়ের মানুষজন, দুপুরের লাঞ্চ, রোমহর্ষক পথ ভুলবার নয়। পরে তপন আমাকে চুপিচুপি বলেছিল “সঠিক পথে না নিয়ে গিয়ে আপনাদের দম টেষ্ট করেছিলাম”। রাতে শিলিগুড়ি ফেরার পথে মোতিয়াল সাহেবও বলেছিলেন “আর কোনও সহজ পথ নেই সিটং যাবার এটা মানাই যায় না”।

এখানে নিজের অপদার্থতার একটা মজার গল্প বলতে হচ্ছে। কারণটা পরে বলব। নিগমনগরে অফিসের একসেট চাবি তাপসের কাছে অন্যটি আমার কাছে থাকত। একদিন অফিসে এসে চাবির ব্যাগ তাপসকে দিয়ে বললাম “ক্যাশ বার করে নে”। তাপস সেফ রাখার ছোট্ট ঘর থেকে বলেছিল “সেফের দ্বিতীয় চাবিটা নেই”। খোঁজা হল, নেই নেই নেই। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। কপালে সাসপেনশনের ফাঁড়া দেখলাম? প্রদীপ দাস সাহেবের সঙ্গে সম্পর্কটা সে সময় “ব্লো হট ব্লো কোল্ড”।

সাইকেল চালিয়ে দিনহাটার বাড়িতে এলাম, যদি ড্রয়ারে চাবিটি থাকে। ওখানেও নেই। হতাশ হয়ে অফিসে ফিরলাম। রতন খবর দিয়েছিল আগের দিন সন্ধ্যায় শিশুরা বারান্দায় খেলার সময় একটা বাচ্চা নাকি কিছু একটা চকচকে জিনিস কুড়িয়ে পেয়েছে। বাচ্চাটি মামা বাড়িতে থাকে। শিশুর সেই মামা আমাদের গ্রাহক। ছুটলাম তার বাড়িতে। মামা বা শিশুটি কেউ নেই। শিশুটির দিদা আমাকে বলেছিল “কী হয়েছে”? সব শুনে বললেন “হ্যাঁ, গতকাল আমার নাতি একটা বড় চাবি খুইজা পায়। অর কাছেই আছে”।

একটু পরেই মামা ভাগনে প্রায় একসাথেই উঠোনে এসে দাঁড়াল। দিদা তার নাতিকে বলল “কাল যে বড় চাবিটা দেখাইছিস ওইডা নিয়া আয়”। শিশুটি ঘাড় নিচু করে দাঁড়িয়ে। এবার দিদা হাতে একটা চ্যালা কাঠ তুলে নিতেই সে দৌড়ে ঘরে ঢুকল। বেরিয়ে এলো পুরনো একটা সিগারেটের কৌটো নিয়ে। তখন আমাদের দমবন্ধ অবস্থা। কৌটো থেকে বেরিয়ে এলো সাত রাজার ধন সেফের চাবি। কুড়ি টাকার মিষ্টি কিনে শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে কিন্তু মিষ্টি আমার কাছ থেকে নেয়নি। আবার দিদার হাতে উঠেছিল চ্যালা কাঠ …।

প্রদীপ দাস সাহেব বলতেন “এটা সাধারণ কোনও সরকারি অফিস নয়। যে কোনও আর্থিক সংস্থায় ডিসিপ্লিন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি”। পরে কথাটির যথার্থতা হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছিলাম। সর্বোচ্চ স্তরে একটু দুর্বলতা দেখা দিলেই বা নজরদারিতে ঢিলে দিলেই, অসাধু চরিত্রের মানুষজন তাদের তৎপরতা শুরু করতো। যদিও এমন দুষ্টু চরিত্রের মানুষ খুব কমই ছিল। চোর ধরার ব্যাপারে আমি একান্তই অপটু ছিলাম। তবে এনকোয়ারি অফিসার ছিলাম অন্তত ১৭-১৮টা ডিপার্টর্মেন্টাল এনকোয়ারিতে। এর মধ্যে দুটি কেসে প্রেসেন্টিং অফিসার ছিল সিবিআই ইনসপেক্টার। পরে সুযোগ পেলে ডিপার্টর্মেন্টাল এনকোয়ারির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। ব্যাঙ্কের কর্মী বন্ধুরাই অসাধু ক্রিয়াকর্মের খবর পৌছে দিত। আসলে কর্মীরা কখনও অসাধুতা প্রশ্রয় দেয়নি। এখনও অসাধু চরিত্রের অমানুষরা সার্বিক কর্মীজগতে ব্রাত্য এবং অস্পৃশ্য।

পরে একবার অনুজ প্রতিম নির্মল ঘোষ (নাজু)র কাছ থেকে চাবি হারিয়েছিল। একমাত্র ওখানেই আমি ডিফেন্স করেছিলাম। কিছু টেকনিকাল অসঙ্গতির ধরিয়ে দেওয়ায় প্রথম দিনের প্রসিডিঙের পর এনকোয়ারি আর অগ্রসর হয়নি। নাজুর বিশেষ দোষও ছিল না। কিছুদিন পর ওকে হালকা ধমক দিয়ে কেসটা গুটিয়ে নিয়েছিল। তখন সিতাই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিল বৈদ্যনাথ বাবু। আগলহীন মুখ। ওর সঙ্গে ব্লকে এবং দিনহাটা মহকুমায় একাধিক মিটিঙে বসে ভেবেছি একজন নির্বাচিত মানুষের মুখে এমন অসংযত ভাষা ভাবাই যায় না। অবশ্যি উনি ব্যতিক্রমী মানুষ ছিলেন। সুযোগ পেলে ওর কথা শোনাব।

(ক্রমশ)

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team