নাম শুনলুম ময়ূরী দে। বছর তিরিশেক হবে হয়তো। বেশ হাসিখুশি কবি। কোনও এক সাহিত্যসভায় তাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ। এলোকেশ ছড়িয়ে জোড়াসনে বসে খান তিনেক কবিতা পড়লেন। মন্দ লাগছিল না। কিন্তু সভামুখ্য মহানন্দ ঘড়ুই তার শ্লেষ্মা বিজড়িত কন্ঠে হঠাৎ 'বেশ বেশ, চমৎকার!' বলে ময়ূরীর উড়ন্ত প্যাখমে লাগাম পরান। মোবাইল হাতে হাতে পৌছলেও স্মার্ট ততটা হয়নি। তখনও কবিতার খাতা দেখেই পাঠের চল। বেচারা চারদিকে একবার করুণ চোখে চেয়ে নিতান্ত অনিচ্ছায় খাতাটি বন্ধ করে ব্যাগে রাখে। কথা সত্য বটে তখনও গোটা চারেক নতুন কবি বাকি রয়েছেন। তাদের পাঠ সাঙ্গ হলে তবে গে পুরনোরা পড়বেন। সব্বাইকে সুযোগ দিতে হবে। কাউকেই চটানো যাবেনা। কেউ অসন্তুষ্ট হলে পরেরবার ডাকলেও হয়তো এলেনই না! অন্য কোনও সাহিত্যগোষ্ঠীর সান্ধ্য আড্ডায় গিয়ে কবিতার খাতা খুলে বসলেন। তখন কী হবে? আয়োজক কবি মশাই শতরঞ্জির শূন্যতায় একাকি বসে বসে করবেনটা কী! এ শহরেও কয়েকটি সাহিত্যগোষ্ঠী আছে বইকি। কেউ কেউ একনিষ্ঠ মানে একটিমাত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কেউ বা সর্বত্রগামী। লক্ষ্মী পুজোর পুরোহিতের মতো এখানে ওখানে ঘুরে ফিরে স্বরচিত রচনা পাঠে তৃপ্ত। সে যাই হোক তাতে করে এ জগতে কারও কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি কিছুই হয়না।
তা আমি গোষ্ঠীতে নয় সমষ্টিতেই স্বচ্ছন্দ, লেখা নিয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়, ভালই লাগে। পাঠ করি বা না করি সে পরের কথা; শুনতে যেতে অসুবিধা নেই। ডাকলে যাওয়াটাই ভদ্রতা। মহানন্দবাবু বয়স্ক মানুষ। স্কুলে ভূগোল বা ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন, আর শুনেছি এ শহরের একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আবার কীসব কমিটির সভাপতিটতিও। কবিতা না লিখলেও যে কোনো সাহিত্যসভায় তাঁকে সভাপতির আসন অলংকৃত করতে দেখছি বহুকাল ধরে। তা সেদিনও ওনার আর কোথাও সভাপতিত্বের বরাত ছিল কিনা বলতে পারি না। সবাইকে কেমন তাড়া লাগাচ্ছিলেন!
যাইহোক সেদিন কবিতা ও চা-পান পর্ব শেষে বিদায় নেবার পালা। কবি ময়ূরী এগিয়ে এসে আলাপ করেন, মোবাইল নম্বর দেওয়া নেওয়া হল। তিনি জানান, একদিন সপুত্র আমাদের বাড়ি আসবেন বেড়াতে। মালবাজারের ওইধারে এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শুধু ভালবাসেন বলেই লেখেন। নইলে সংসার, সন্তান, চাকরি, ডেইলি প্যাসেঞ্জারি ইত্যাদি বহুবিধ কর্মযজ্ঞ সামলে কি লিখতেন, নাকি সাহিত্য আড্ডায় যোগ দিতে আসতেন? এরকম বহুকথাই বলেন অল্পসময়েই কবি ময়ূরী। আমিও তাঁকে সানন্দে আসতে বলি। একমুখ হাসি ঢেলে 'আচ্ছা আসি দিদি' বলে সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন 'আচ্ছা দিদি আপনি পত্রিকা করেন শুনলাম। খুব ভাল। যাবো এর মধ্যে একদিন হ্যাঁ।'
দিন পনেরো পরে বিকেল বিকেল ফোনাফুনি করে বাড়ির নির্দিষ্ট গলিপথ বেয়ে এসে পড়লেন। সঙ্গে বছর ছয়েকের পাতলা চেহারার এক বালক। নাম তার মস্কো। বালকের চোখেমুখে দুষ্টুমি। হাতের মুঠো থেকে ঝুলছে হাত আর কান ছেঁড়া একটি খেলনা শিম্পাঞ্জি। ছেলের কপালে, নাকে, গালে আঁচড়ের নাকি খিমচির দাগ! দু'মিনিট এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে পরখ করেই সে ক্রমাগত দ্রুত পদে সিঁড়ি বাইতে থাকে। তার মা অনর্গল কথা বলে চলে, কবিতা-স্বামী-ভ্রমণ-টিউশন আরও না জানি কত শত বিষয়ে! তার পুত্রের পতনাশঙ্কায় অস্থির হয়ে থাকি আমি, ভাল করে ময়ূরীর বাক্যে মনোযোগ দিতে পারি না।
'তা তুমি টিউশন পড়াও কোথায়?' জিজ্ঞেস করি আমি। 'ওখানেই, স্কুলের পরে একটা কোচিং সেন্টারে ইংরেজি পড়াই। গার্জিয়ানরা ছাড়ে না। তাই ফিরতে ফিরতে সাতটা আটটা বেজেই যায়। তার মধ্যে কবিতা লেখা, বোঝো দিদি।' হায়, কে মাথার দিব্যি দিয়েছে লিখতেই হনড়? 'তা তোমার বাচ্চা কার কাছে এতটা সময় থাকে? বর?' ' নাগো দিদি, ওরও তো টিউশন আছে। ব্যাচে পড়ায়, বাড়িতেই। লোকাল স্কুল ওর। আমার মা মাঝে মাঝে এসে থাকে। কাজের মহিলা আছে। আর স্কুলে যায়। ও-ই।'
একটু পায়েস বানিয়েছিলাম। মস্কো নিজেই চামচ দিয়ে খেল। খুশি হয়ে বলি, বাঃ! মস্কো দেখছি ভারি গুডবয়। তার পরের ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না মোটে। সে তার নিজের ও মায়ের বাটি থেকে পায়েস তুলে টেবিলে আলপনা দেয়, আস্ত লুচি ছিঁড়ে সেই আলপনার ওপর সাঁটিয়ে দেয়। তার মা বলে, 'দেখলে দিদি কেমন পাজি ছেলে। দাঁড়া তোকে আজ আর বাড়ি নিয়ে যাবনা। জঙ্গলে ফেলে দিয়ে যাব। দিদি আজ উঠি। এ বসতে দেবেনা। ও তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। দাঁড়াও দিচ্ছি।' ছেলের হাতটাত ধুইয়ে সে ‘মাসিমণিকে টাটা কর বাবু’ বলতে বলতে রওনা দেয়, পুনরাগমনের বার্তাটিও নিশ্চিত করে এবং হাতে গুঁজে দিয়ে যায় লাইন টানা খাতার পাতা। যেখানে নীল কালিতে হাতে লেখা কয়েকটি কবিতা! হায়!
ওরা চলে যেতে ভেজা ন্যাতা, ঝাড়ু ইত্যাদি নিয়ে কাজে লেগে পড়ি। যা মুখে বলতে পারি না সেটাই মনে মনে বলি,'ভাই, দুজনেই চাকরি করছ। মাইনেও সরকার খারাপ দিচ্ছে না এখন, তা এত টিউশন করার দরকারটা কী? গার্জিয়ানরা ছাড়েন না তাই? তা তোমরাও তো ভাই এক খুদের অভিভাবক, তোমাদের উদ্যোগেই তার এ ধরায় আগমন। তাকেও তো সময় দিতে হবে, দিশা দেখাতে হবে!
মাসখানেকের মধ্যে মাতা-পুত্রের পুনরাগমন ঘটে। এবার বালকের হাতে ছোটো ছোটো গুটিকয়েক প্লাস্টিকের ফুল পাতা, সার্টের ফুলে থাকা পকেটে যেন কী ভরে এনেছে! আমার দিকে চেয়ে মস্কো মিষ্টি করে হাসে। তার মা বলে, 'কাল থেকে জ্বালাচ্ছে তোমাদের বাড়ি আসবে আর টবে গাছ লাগাবে। দ্যাখো আমাদের বাড়ির ফুলদানি থেকে ফুল পাতা ছিঁড়ে এনেছে, সব্জিগুলো বড় হলে তখন তুলে নিয়ে যাবে।' অতি তৎপর বালক বারান্দার টবে প্লাস্টিকের ফুল পাতা বুনতে শুরু করে। মুখে বলি, 'কেমন কল্পনাপ্রবণ ছেলে তোমার। বাঃ!' মনে বলি, কেন রে বাছা তোদের বাড়ির টব কী দোষ করেছে?
ইতিমধ্যে গাছ লাগানো শেষ করে বালক তখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে নুড়িপাথরগুলো বের করে হাতের টিপ পরীক্ষা করতে লেগেছে। 'এই থামাও, থামাও আশপাশের বাড়ির জানালার কাচে লাগতে পারে।' বকাঝকা দিয়ে চা-বিস্কিট অর্ধেক ফেলে তারা বিদায় নেয়। ছেলে যাবার আগে দ্রুত হাতে চানাচুর আর বিস্কিট সমেত প্লেটটি কি মনে করে চায়ের কাপের ওপর উলটে দিয়ে যায়!
যাইহোক এমন করেই ময়ূরীর সঙ্গে সম্পর্ক। মাঝেমধ্যে ফোনালাপও হয়। একদিন সে ফোন করে, 'দিদি ট্রেনে চেপে সেবক যাবে? লাটাগুড়ি স্টেশন হয়ে ফরেস্টের মধ্যে দিয়েই যায়। আমি তো ট্রেনেই যাই স্কুলে। বনের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় কী যে ভাল লাগে! অপূর্ব! বর্ষাকালে তো আরও সুন্দর! ময়ূর দেখেছি কতবার। পেখম মেলে নাচতে দেখেছি। সেবক স্টেশনে আমরা নেমে যাব। বাঘপুল-টুল সব ঘুরে বেড়াবো। ছবি তুলবো। কবিতা পড়ব একটা সুন্দর জায়গায় বসে। তারপর ওখানে যেকোনো হোটেলে লাঞ্চ সেরে নেব তারপর বিকেলের ফেরার ট্রেনে চেপে চলে আসবো। দোমহনি থেকে ট্রেন ধরতে হবে কিন্তু। তাই তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে আমাদের। তনয়াদিকে বলব?'
আরে, অপূর্ব প্ল্যান। তার বর্ণিত দৃশ্যাবলী কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাই! তায় বেড়ানোর নামে সর্বদা একপায়ে খাড়া আছি; আমার এই দুর্বলতার খবর বন্ধুমহলে সব্বাই জানে।
'আরে বাঃ! আমি তো রাজি। আচ্ছা গুলমা স্টেশনে নামা যায় না? খুব সুন্দর জায়গা, সবাই বলে। আমি যাইনি রে এখনো। কী বল?'
'নাগো ওখানে একটু রিক্স হয়ে যাবে। যখন তখন হাতির দল বেরোয়। '
যাইহোক এক সকালে বেরিয়ে পড়ি, সাড়ে আটটার বাসে চেপে দোমহনি মোড়ে নামা, সেখান থেকে ভ্যানে চেপে স্টেশন তারপর ট্রেনে চেপে, আহা! কল্পনায় দেখি... অভূতপূর্ব মনোহর দৃশ্যাবলী! দলে দলে নৃত্যরত ময়ূর ময়ূরী, বাইসনের দল, হেলেদুলে চলা গজরাজ... দেখতে দেখতে গন্তব্যে। সেখানেও দু'পাশের বৃক্ষশোভিত পর্বতের মাঝে পান্নারঙা তিস্তার ছন্দময় চলন। উফফ! আজ আনন্দের দিনই বটে।
ফোনাফুনি করে সময় ঠিক হয়েছে। ময়ূরীই গাইড। তার চেনা পথ। তিনজনের বাড়ি তিনখানে, বাসস্টপ আলাদা। সবার আগে ময়ূরী উঠবে, তারপর পোস্টাফিস মোড় থেকে আমি শেষে বিডি অফিসের সামনে থেকে তনয়া।
বাস আসে। উঠেও পড়ি হাসিমুখে। বাস চলতে শুরু করে। ময়ূরীকে খোঁজে আমার ব্যাকুল নয়ন। কিন্তু সে কই? বাসের এমাথা ওমাথা খুঁজি, দেখতে তারে পাইনা! অনেক মুখচেনা ডেইলি প্যাসেঞ্জার সে বাসে যাতায়াত করেন; মালবাজার, চালসা, ওদলাবাড়ির। তখনও দু তিনটে সিট ফাঁকা। কন্ডাকটর দাদা চোখের ইংগিতে ফাঁকা সিটে বসতে বলেন। কী করি, বুঝে উঠতে পারিনা। বসেই ফোন করি ময়ূরীকে, এক পুরুষ কন্ঠ উত্তর দেয়, 'যাচ্ছে যাচ্ছে। আপনারা আগান।' এ আবার কী কথা! ভদ্রলোকটি কে?
ঝিলিমিলি পোশাক পরে হাস্যময়ী তনয়া ওঠে বিডি অফিস মোড় থেকে। তাকে পরিস্থিতি জানাই, সদাই আবেগে থরথর তনয়া বলে, 'না আসুক আমরাই যেতে পারবো। ট্রেনে উঠে বসলেই তো হল; ও ওইরকমই, পাগল টাইপের। চল তো দুজনেই যাব। কী আর হবে। আমি কবিতার ডাইরিটা নিয়ে আসচি। উফ কী মজা!' হঠাৎ ঘ্যাঁচ করে বাস থামে পাহাড়পুর মোড়ের আগেই। একটা স্কুটার থেকে নেমে দৌড়ে এসে বাসে চাপে ময়ূরী। স্কুটারে সপুত্র ময়ূরীর উলুঝুলু চুলের স্বামী। আমরা চমকিত ও আনন্দিত! তখনো তিস্তা সেতু পেরিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে ময়নাগুড়ির দিকে এগোলে দোমহনি মোড়ে নেমে, ভ্যানে চেপে দোমহনি রেলস্টেশনে যাওয়া যায়। ফোর লেনের রাস্তা বা উড়ালসেতুর পরিকল্পনা তখন জমি-জটে আটকে।
যাইহোক দোমহনি মোড়ে নেমে ময়ূরীর পরিচিত ভ্যানে চেপে পড়ি আমরা। 'ট্রেনের টাইম প্রায় হয়ে যাচ্ছে রে, তাড়াতাড়ি কিন্তু।' তরুণ চালক প্যাডেলে চাপ দিয়ে হাসিমুখে গল্প জোড়ে 'দেরি করিলেন দিদি! ভাবচি আজি ছুটি নাকি। চাপি বসেন পিছনে। নতুন দিদিগিলা আবার মোটা। ঢালে নামিবার সময় ভাল করি ধরি বইসেন।' খানিকটা এগিয়ে ডাইনের একটা বেশ খতরনাক ঢাল বেয়ে ভ্যান নীচের রাস্তায় নেমে স্টেশনের দিকে ছোটে। ওমা! ট্রেনের হুইসিল শোনা যায়। 'আরে গল্প না করে জোরে চল রে বাবা।' সরু রাস্তাটির বাঁ-ধারে রেলের মাঠ তার পাশে রেললাইন। সামান্য এগিয়ে স্টেশন। ঝিকঝিক করতে করতে ট্রেন স্টেশনে ঢুকে গেল। 'থাম থাম, নামো নামো, মাঠটা ক্রশ করে পেছনের কামরায় উঠে পড়তে পারব আমরা। কী গো পারবা না দৌড়াতে? তাহলে দৌড়াও।' নির্দেশ দেয় ময়ূরী। 'খুব পারবো, খুব পারবো' বলে হাঁচড়পাঁচড় করে ভ্যান থেকে নামতে গিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম। 'আর ভ্যানের ভাড়া আর ট্রেনের টিকিট?' বলতে বলতে এবড়োখেবড়ো মাঠে দৌড়াতে থাকি। লাইন পেরিয়ে ওধারের প্লাটফর্মে পৌঁছে যাই এবং ট্রেনে উঠে পড়ি। ফাঁকা ফাঁকা ট্রেন। হুইসিল দিয়ে ট্রেনটি গন্তব্যে রওনা হয় ধীরে আস্তে।
আঃ! যাক শেষ পর্যন্ত। কত্ত ফাঁকা সিট। আরামসে জানালার ধারে বসি। পরস্পরের দিকে তাকাই যুদ্ধজয়ের হাসি নিয়ে। এইসময় সাদা সার্ট আর কালো ফুলপ্যান্ট, গলায় লাল সুতোয় বড়সড় তাবিজ, পানের রসে ভেজা ঠোঁট আর হাসমুখ এক ভদ্রলোক এসে বলেন,'দারুণ দৌরাইসেন আপনেরা। ট্রেন আপনেরা ঠিকই পাইতেন। থামায় রাখতাম। দেকসি তো তিন জনে দৌরাইতেসেন।' 'আর বইলেন না, আজকে একটু দেরি হয়ে গেল।' 'আজকে আবার কি? আপনে তো পতিদিনই দৌরান।' বলতে বলতে ভদ্রলোক ওপাশের দরজায় দাঁড়িয়ে বাহিরের শোভা দর্শনে মগ্ন হন। 'কে রে উনি?' ময়ূরী ততক্ষণে গুছিয়ে বসেছে নিশ্চিন্ত মনে। চিরুনি, টিপের পাতা, কানের দুল, ছোট্ট গোলাকৃতি একটা আয়না এসব নিয়ে খানিক ব্যস্ত হয়েছে। তনয়া ব্যাগ থেকে সানগ্লাস বের করেছে, জল খাচ্ছে। 'ও উনি রেলের লোক। সুবোধদা। আমার চেনা।' 'তা ওনাকে বললেই তো হয়, টিকিট কেটে নিই আমরা।' 'বলে দ্যাখো গা, নিবে না।' সে আবার কী? ভারি অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকি। বাইরের দৃশ্য, ময়ূরের নৃত্য কত কি দেখার বাকি। কিন্তু টিটি যদি ওঠে? টিকিট দেখতে চায়, তারপর যদি নামিয়ে নেয়, ফাইন চায়, তখন? কত লজ্জার বিষয়! খবর কি আর চাপা থাকবে? আত্মীয়রা, ছাত্রছাত্রী আরও সব চেনা লোকজন... ছিঃ! বড় অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকি। তনয়া সেল্ফি-মগ্ন। ময়ূরী সজ্জাকরণে। আমার কী করণীয়? খানিক উশখুশ করে সুবোধদার কাছে যাই।'আমাদের তিনজনের টিকিটটা কাটতে চাই। দেখলেন তো কত দৌড়াদৌড়ি করতে হল। সময়ই পেলাম না। 'হ্যাঁ দেখসি, বসেন গা। লাগবেনা। হয়া যাবে।' উনি আবার বাহিরের দৃশ্যে মগ্ন হন। বাপরে! কে হন উনি রেল কোম্পানির? এরকম কত ট্রেন চলে ভারতবর্ষে? কত ডজন সুবোধ দা আছে এই দেশে!
যাক যা হবে দেখা যাবে। চাষের জমি, ছোট ছোট লোকালয় পেরিয়ে, লাটাগুড়ি স্টেশন পেরিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল ট্রেন। আকাশ ঝকঝকে নীল। দূরে দূরে গাছপালা আছে বৈকি। কিন্তু হায়! কোথায় সেই গভীর অরণ্য! কেমন ফাঁকা ফাঁকা! প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে! কেন কে জানে! কত শত সুবোধদা যে ছড়িয়ে সারাদেশে! এ দেশের গাছপালা, অরণ্য, ভূমি, নদী, বালুচরের বালু, বাস, ট্রেন সবই তারা আপন ভেবে, আপন করে নিয়েছে?
নাঃ! ময়ূরের নৃত্য দেখবার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছিল না মোটে। কিন্তু বাইরের একটা নেশা আছে, তাকিয়ে থেকে থেকে ঘোর লেগে যায়। নিজের মনে সান্ত্বনা খুঁজি, সামনে 'গুলমা' যাবো তো একদম তিস্তার কাছে, সেবক পাহাড়ের কাছে। গুনগুন গান জাগে গলায়। ভালোই লাগছিল। চলাটাই কথা। প্রাত্যহিক নিয়মের বাইরে এই অন্যরকম। বেশ লাগছে।
হুইসিল দিতে দিতে ট্রেন থামে এক স্টেশনে। চট করে ব্যাগ নিয়ে সটান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ময়ূরী বলে ওঠে, 'এই চলে এসো, চলে এসো। নামতে হবে। এসো এসো।' ও নেমেও পড়ে। হতবাক আমরা ওকে অনুসরণ করি। ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করে যায়। স্টেশনের নাম দেখছি 'বড়দিঘি'...'কী ব্যাপার ভাই! এখানে কেন? আমরা সেবকে যাব না? এখানে নামালে কেন?' তনয়া সেল্ফি ভুলে এতক্ষণে বলে,'কী গো, বড়দিঘি লেখা তো!' 'হ্যাঁ, এখানে তোমরা কোনোদিন এসেছিলে আগে?' ময়ূরীর চোখেমুখে কেমন তার পুত্র মস্কোর মতো মিটিমিটি হাসি! 'তোমরা রাগ কোরো না, আরেকদিন নিয়ে যাব সেবকে। আসলে আমার না একটা কাজ আছে বিকেলে, চারটায় পৌঁছাতে পারলেই হবে। ভুলেই গেছিলাম। এখুনি মনে পড়ল।' 'তা এখন আমরা কি করব? ফেরার ট্রেন কখন? যাঃ! কী যে কর ভাই তুমি। এত ছোটাছুটি।' আশাভঙ্গজনিত কারণে খানিক মুষড়ে পড়ি।
আবার সান্ত্বনা দিই নিজেকেই, যাক রুটিনের বাইরে অন্যরকম কিছু তো হল। স্টেশন বেশ পরিস্কার। বেঞ্চে গিয়ে বসি আমরা। ওধারে একটামাত্র ছোট্ট চায়ের দোকান।'আচ্ছা, চল চা তো খাই আগে, পরে ফেরার ট্রেন ধরে চলে যাব।' একটা বাচ্চা ছেলে এসে বলে, 'চা খাবেন নাকি? দুই কাপই আসে। খাবেন তো নিয়া আসি।' ছেলের পেছনে তাদের দোকানে যাই। বয়স্ক মানুষ একজন, বলেন 'কার বাড়ি যাবেন?' 'চা দেন তিনকাপ। কারও বাড়ি যাবনা। এইখান থেকে ফেরার ট্রেন ধরবো।' 'এখন আর ট্রেন নাই তো। সেই সাড়ে তিনটায় আসবে। দোকান বন্দ করি বাড়ি যাব। চা তো দুই কাপই হবে। এখন আর বানাবো না। বিকালে আইসে দোকান খুলবো, তখন আবার চা হবে।' বলে কি! এখন বেলা এগারোটা, এতক্ষণ এখানে বসে থাকব? 'দেন তাহলে দুই কাপ চা তিনটা কাপে ভাগ করে দেন। বিস্কুট দেন তিনটা।'
তারা দুজনে নানা বিভঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত। বিকেলের আগে ট্রেন নেই শুনেও তাদের তেমন হেলদোল দেখিনা! হাত ধরে টেনে তাদের মাঝখানে বসিয়ে নিয়ে আবার দেদার সেল্ফি। ছোট ছেলেটি এসে চা-বিস্কুট দিয়ে যায়। দোকান গুটিয়ে ফেলে তারা। বাচ্চা সমেত ক'টা কুকুর আমাদের আশেপাশে গুটলি পাকিয়ে শোয়। রেললাইনের ওপারে ডানধারে সরু মাটির রাস্তা, খড়ে ছাওয়া কিছু বাড়ি, বাঁশঝাড়। বাঁ-ধারে পরপর কয়েকটি রেলের কোয়ার্টার।খুব শান্ত পরিবেশ। সবুজ গাছপালা, নীল আকাশ। মনটা ভাল হয়ে যায় হঠাৎ। যাক একটা নতুন জায়গা তো দেখা হল। কবিতার খাতা বের করে তনয়া। ময়ূরী বলে 'আচ্ছা আমি একটা গান গাই হ্যাঁ। পরে কবিতা পড়ব। জলের বোতলটা দাও তো একটু।'
'এইখানে কী করেন আপনারা? বইসে আছেন ক্যান এইখানে?' কে রে বাবা! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রোগা-সোগা একটা লোক দাঁড়িয়ে। 'বসে আছি আমরা। কেন? কী হল?' 'না মাস্টারবাবু জিগাস করল, আপনারা কে? এইখানে কেন বইসে আছেন? এখন তো ট্রেন নাই।' জানি তো ট্রেন আসবে বিকালে। কেন স্টেশনে কী বসার নিয়ম নাই? বসা যাবে না?'
সত্যিই তো রেলের নিয়ম কানুন জানিনা। প্রত্যন্ত স্টেশনের প্লাটফর্মে, ফাঁকা বেঞ্চে বসে থাকায় আবার বিধিনিষেধ আছে নাকি? কে জানে রে বাবা! আচ্ছা তাহলে ফেরার টিকিট কেটে নিই আমরা তাহলেই হল। আমরা রেললাইনের দিকে মুখ করে বসেছিলাম। আমাদের পেছনেই ছোট্ট স্টেশন ঘর, তারই দরজায় দাঁড়িয়ে গোলগাল চেহারার স্টেশনমাস্টার। আর এই রোগা মানুষটিও রেলের লোকই হবে। 'হাঁ আপলোগ ইহাপে কিস লিয়ে আয়ি? কাঁহা যায়েঙ্গে, ট্রেন তো নেহি হ্যায় আভি।' 'এমনিই বসে আছি। কবিতা পড়েঙ্গে, গানা গায়েঙ্গে, ছোটাসা আউটিং সমঝ লিজিয়ে। টিকিট দিজিয়ে, হমলোগ আভি টিকিট খরিদ লেঙ্গে।'
ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন, তাঁর কোঁচকানো মোটা ভুরু সমান হয়। 'কবিতা! কবি হ্যায় আপ সব? কবিতায়ে লিখতে হ্যায়? বহত আচ্ছি বাত হ্যায়। টিকিট তো আভি নেহি মিলেগা। ট্রেন আনে সে পহেলে ফির মিলেঙ্গে টিকিট। আভি তো স্টেশন বন্ধ রহেগা, তো আপলোগ কবি হ্যায়!' ময়ূরী আর তনয়া তাদের কবিতার খাতা উঁচু করে দেখায় স্টেশনমাস্টারকে। 'হ্যাঁ, আমরা কবি,এই তিনজনেই।' যেন আত্মরক্ষার কবচ 'আমরা কবি' শব্দবন্ধটি। এমন সোচ্চারে 'আমরা কবি' আর কেউ কখনো বলেছি বলে মনে পড়ল না।
'ঠিক হ্যায় বইঠিয়ে আপলোগ।' তিনি ও তাঁর সঙ্গী স্বস্থানে ফিরে যান। স্টেশন ঘরের দরজায় বড় একটা তালা ঝুলিয়ে আবার আমাদের নিকটে এসে হাসিমুখে বলেন, 'দেখিয়ে ওহি নজদিগমে হমারা কোয়ার্টার। আপ সব চলিয়ে। ইহাপে গরমি যাদা হ্যায়, চলিয়ে জি। ফ্যান হ্যায় উধার, ওহা বইঠকে কবিতা পড়িয়ে ফির চায় ওয় পিকে চলা যাইয়েগা। হম তো কবিতাপ্রেমী হ্যায়। চলিয়ে, শুনাইয়েগা দো-চার কবিতায়।'
'আরে নেহি নেহি ভাইসাব। হম ইহাপে বিলকুল ঠিক হু। কিতনা খুলা আসমান। কিতনা সুন্দর হ্যায় সব। জাগা ভি হমারে লিয়ে নয়া হ্যায়। থ্যাঙ্কিউ স্যার। আপ যাইয়ে।' যেন নিতান্ত অনিচ্ছায় তিনি স্থান ত্যাগ করেন। আমরা ওনার আমন্ত্রণে বিস্মিত! এমনও হয়।'তা ময়ূরী, এমন আচমকা তুমি এখানে নামলে বলেই না এই নিমন্ত্রণ! এরম বেরিয়ে আসাই ভাল রে। সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়।' খানিক বাঁ দিকে হেঁটে ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে লাইনে নামেন স্টেশনমাস্টার, লাইন পেরিয়ে ওধারের কোয়ার্টারে ঢুকতে দেখি ওনাকে।
একদম ফাঁকা সুনসান স্টেশন। কতিপয় সারমেয়, দুটি ছাগশিশু আর আমরা তিনজনা। এরপর মেলা আড্ডা, গল্প, কবিতা, গান, হাসাহাসি চলতে থাকে আমাদের। মাঝে ঘন্টা দুয়েক হুহু করে কেটে যায়। ভর দুপুর, বেলা দেড়টা। খিদেও পায়। ধারেকাছে কোথায় যে দোকান বাজার জানিনা। 'শুনেছিলাম বড়দিঘিতে একটা রিসোর্ট আছে, খুব ভাল রান্না। খুঁজে দেখলে হয় না?' কী জানি কদ্দুর সে রিসোর্ট। আরও মেলা সময় ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের!
হায় কত কী হয় এ জগতে! স্টেশনমাস্টার লাইন ডিঙিয়ে পুনরায় এসে অবাক করে দিয়ে বলেন, 'খানা পাকায়া আপ লোগকি লিয়ে। প্লিজ চলিয়ে মেরে সাথ। কুছ নেহি থোরা চাবাল ওর দাল পাকায়া, আভি আর কুছ হ্যায় নেহি। চলিয়ে প্লিজ। গরমি ভি যাদা হো গয়া আভি। ভুখ ভি লগ গয়া সায়েদ, চলিয়ে।'
কী বলবো ভেবে পাইনা। এমন আমন্ত্রণ অস্বীকার করা যায় নাকি? এই আন্তরিক আহ্বানের পরে না যাবার কোনো যুক্তিও নেই। এখন না গেলে ওনাকে যারপরনাই অপমান করা হয়।
কিন্তু এমন মানুষও আছে এই দেশে! আমাদের ওপাশ দিয়ে ঘুরে আসতে বলে উনি দ্রুত পদক্ষেপে এগোন। আমরা অনুসরণ করি। কিন্তু মাথায় হাজার চিন্তা! ভারতীয় রমণী, সর্বত্র অজানা বিপদের আশংকায় উদ্বিগ্ন! তনয়া বলে, 'শোনো আমি কিন্তু খাবনা। খাওয়ার ভান করবো। মোবাইল নাম্বার সেট করে রাখবো। যদি দেখি ডাল-ভাত খেয়ে তোমরা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছ তাহলে আমি মোবাইলে বাড়িতে খবর দিয়ে দিব, বুঝলা। আর বাইরে গিয়ে লোকজন জুটায়ে নিয়ে আসবো।' 'বাববা কী বুদ্ধি তোমার। '
ভদ্রলোক আমাদের বাথরুম দেখিয়ে দেন। ছোট্ট রান্নাঘর। ছোট্ট বেডরুম। রান্নাঘরের সামনের জায়গায় একটা ছোট তক্তাপোশ, একটা টুল, আমরা টুল আর তক্তাপোশেই বসি। উনি তিনটি থালায় ভাত বাড়েন, গরম ধোঁয়া ওড়া মোটা চালের ভাতের মাঝখানে ডাল। থালার একধারে আমের আচার, কাঁচা পেঁয়াজ একটুকরো, কাঁচালঙ্কা আর নুন। 'আপনার থালা?' অতিথিদের দিয়ে তারপর উনিও ভাত বেড়ে নেন। জানান, সকালে ভেন্ডিভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে স্টেশনে গেছিলেন। আজ বিকেলের ট্রেন পাস করিয়ে বড়দিঘি বাজারে যাবেন। কাছেই বাজার, স্টেশনের পেছনে। অল্প হাঁটতে হয়। আমরাও অতক্ষণ ট্রেনের অপেক্ষায় না থেকে বড়দিঘি বাজার থেকে জিপে করে ন্যাওড়া বা লাটাগুড়ি চলে যেতে পারি। ওখান থেকে জলপাইগুড়ির বাস হরদম পাওয়া যায়, উনি পরামর্শ দেন।
খেতে খেতে নানা গল্প চলে। আড়চোখে চেয়ে দেখি কোথায় ভান কোথায় কী? তানিয়া চেটেপুটে তরিবৎ করে খেয়ে নিয়েছে সেই অমৃত সমান অন্ন। গল্পে গল্পে উনি জানান, তিন ছেলে মেয়ে আর বউ, মা-বাবা সবাই আছে দেশের বাড়ি, সমস্তিপুরে। পাটনায় কাকার বাড়িতে থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। খেতিবাড়ির কাজ করেছেন অনেকদিন। পরীক্ষা দিতে দিতে এই চাকরি। তিনবছর এই চাকরি। বিয়ে তো গ্রাজুয়েশন করার পরে বাবা দিয়ে দিয়েছে। বড় মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। সেশনের মাঝখানে আনা যায় না তাই পরে নিয়ে আসবেন সবাইকে। কাছাকাছি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েকে ভর্তি হবে তারা। তখন জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়িতে বাড়ি ভাড়া করতে হবে।
ছোটবেলা থেকেই কবিতা, শায়রি ভালবাসেন উনি। ওনাদের দেশে হরবখত শায়রির আসর বসে। কত দূর দূর গ্রাম থেকে মানুষ শুনতে যায়। সাত মাইল, আট মাইল সাইকেল চালিয়ে উনিও এমন আসরে কত্ত গেছেন। সারা রাত জেগে সবাই কবিতা শোনে! কবিও কো ইয়া শায়ের কো বহত সন্মান হোতা হ্যায় সমাজমে।
আমরা সত্যি বিস্মিত হই! কবিতার জন্য রাত জাগেন শ্রোতারা? সারা রাত? সত্যিই তো, আমজনতার হৃদয় স্পর্শ করে তাহলে সেই রচনা। তাই কবিতার জন্যে এমন পাগল পারা ভালবাসা, কবির জন্যে এত সম্মান। আর আজ এখন? এই ক্ষুধার মুহূর্তে, এই অন্ন!
খেয়ে উঠে ওনার আপত্তি অগ্রাহ্য করে থালাবাটি ধুয়ে, এঁটো পরিস্কার করে শান্ত হয়ে ফ্যানের নীচে বসি আমরা। খানিক গল্প চলে, ময়ূরী গান গায়, ভরা পেটে ভরদুপুরে 'ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি, বনের পথে যেতে। ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে।' না ঘুমটুম কিচ্ছু পায়নি। খাবারে আন্তরিকতা আর ভালবাসা ছাড়া কিছুই মেশানো ছিল না। এমন একটা ভারতবর্ষ এখনো জেগে আছে, মাটির খুব কাছাকাছি একটা ভারতবর্ষ।
ওখান থেকে বিদায় নিয়ে ওনার দেখানো পথ ধরে বড়দিঘি বাজারের দিকে রওনা দিই আমরা। রেললাইনটা ক্রশ করে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, রোদ্দুরের মধ্যে কোয়ার্টারের সামনের ছোট্ট ঘাসজমিতে উনি তখনও দাঁড়িয়ে। দূর থেকেই হাতজোড় করে বিদায় নমস্কার জানাই, ওনাকে নাকি একটুকরো ভারতবর্ষকে!
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team